সাইকো কথাটির আসল অর্থ না জেনেই আমরা কথাটিকে
প্রয়োগ করি কোনও কোনও ব্যক্তির উপরে৷ সাইকোপ্যাথি আসলে একটি মানষিক অসুস্থতা সে
কথা আমরা সকলেই জানি৷ কিন্তু ঠিক কিধরণের মানসিক অসুস্থতাকে সাইকো বলে? সেকথা জানি না আমরা অনেকেই৷ আমাদের চারপাশে এইধরণের
মানসিক অসুস্থতা নিয়ে অনেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ তাদের মধ্যে আপনিও নেই তো? দেখে নিন ঠিক কি কি মানসিক অবস্থার জন্য কোনও ব্যক্তি সাইকো হতে পারে?
অগভীর আবেগ, কম ভয়, উদাসীন সহানুভূতি, ঠাণ্ডা
মাথায় অন্যায় করা, নিজ দোষ শিকার না করা, নিজেকে নি আত্মগরিমা, মানুষকে মিথ্যা কথা দিয়ে
প্রভাবিত করা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, পরিকল্পনা
করে অন্যায় কাজ করা, সুযোগ খোঁজা, মানুষের
ক্ষতি করে অনুতপ্ত না হওয়া, মানুষের কষ্ট দেখে উপহাস করা
এবং অসামাজিক আচরণ যেমন খারাপ চরিত্রের দিকে ধাবিত হওয়া, স্বার্থপূরণের
জন্য নিজের চরিত্র নষ্ট করা, পরের সাফল্যের বা শ্রমের উপর
নিজ জীবনধারা বিন্যাস করা এবং ঠাণ্ডা মস্তিষ্কে অপরাধিত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি। এই
সবের কোনওটিই সুস্থ সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত হয় না৷ মানুষের মধ্যে এসব আচরন
বিদ্যমান থাকলে বুঝতে হবে সেই মানুষটি সাইকোপ্যাথ।
সাইকোপ্যাথ নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে বিরাজমান ।
তবে কারও মধ্যে উপরের যে কোনও একটি আচরন বিরাজমান আছে বলেই ধরে নেওয়া যাবে না যে
উনিই সাইকোপ্যাথ। তবে মনোবিদদের মতে কিছু আচরন আছে যা একাই সাইকোপ্যাথি পয়েন্ট
টেবিলে অনেক উচু পর্যায়ে। এসব আচরনের মধ্যে মানুষের ক্ষতি করে অনুতপ্ত না হওয়া, মানুষের কষ্ট দেখে উপহাস করা, পরিকল্পনা
করে খারাপ কাজ করা, ইত্যাদি সাইকোপ্যাথ আচরনের প্রারম্ভিক
লক্ষণ সমূহ এবং এসব আচরন দেখে আপনি অন্যান্য আচরনগুলো মিলাতে পারেন।
এসব মানুষেরা তাদের ভুল ও অন্যায় ঢাকার জন্য নানা
রকম আপরাধমুলক কাজ করে থাকে এবং সামাজিক সহানুভূতি নেওয়ার চেষ্টা করে।
সাইকোপ্যাথরা প্যাথলজিকাল মিথ্যুক বা অনর্গল মিথ্যা কথা বলে নিজেদের স্বার্থ আদায়
করে এবং এরা নিজেকে ছাড়া আর কিছুই বোঝেনা। সামাজিকতার পরোয়াও এরা করেনা। এদের
অনেকেই উচ্চ শিক্ষিত মানুষদের দলে পড়েন। সাইকোপ্যাথির মধ্যে বিরাজমান চারিত্রিক
বৈশিষ্ট্য সমুহ বিশ্লেষণ করে ডঃ রবার্ট ডি. হেরি সাইকোপ্যাথ চেকলিষ্ট-রিভাইস (পিসি
এল – আর) তৈরি করেছেন। সাইকোপ্যাথের
চারিত্রিক ২০টি লক্ষণ পিসিএল-আর এ বর্ণিত হয়েছে। হেয়ারের মতে একজন অপরাধীর মধ্যে
দ্রুত সাইকোপ্যাথি নির্ণয় সূচক চারিত্রিক লক্ষণগুলোকে উনি কয়েকটি উপধারায় ভাগ
করেছেন।
উপধারা ১.
১. আত্মকেন্দ্রিক: যে স্বীয় সত্তা ছাড়া আর
কারও কথা চিন্তা করে না। সবসময় নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকে ।
২. চাতুর্য্য: এরা অত্যন্ত চালাক এবং
সামাজিক সহানুভুতিকে নিজ স্বার্থে ব্যাবহার করে।
৩. স্বীয় সুখী: এরা নিজের সুখের কথা ছাড়া
আর কারও কথা ভাবে না।
৪. সুস্থ মাথায় হাসি মুখে মিথ্যা বলা: এরা মিথ্যা
বললে তা বোঝার কোনও উপায় নেই। অনড়গল মিথ্যা বলা এদের অভ্যাস।
৫. সুযোগসন্ধানী –
এরা নিজেদের কাজ হাসিলের জন্য মিথ্যা বলতে থাকে।
উপধারা ২.
১. আবেগ কম থাকা: এদের মানুষের জন্য মায়া দয়া কম
থাকে ।
২. নিজেকে সবসময় নির্দোষ মনে করা –এরা কখনওই নিজের দোষ শিকার করে না ।
c. সহানুভূতির অভাব – মানুষের কষ্ট ও বিপদে এরা সহানুভূতি দেখায় না।
উপধারা ৩.
১. উচ্চবিলাসিতা: সুযোগোর মাধ্যমে এরা উচ্চ
বিলাসিতা বজায় রাখে।
২. খারাপ কাজের উদ্দীপনা সংগ্রহের অনুসন্ধানে থাকা
– সুযোগ থাকলেও এরা খারাপ কাজের
দিকে এগোয়।
৩. পরজীবী জীবনধারা: পরের উপর নির্ভর করতে এরা
খুবই পারদর্শী ।
৪. বাস্তবসম্মত,
দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যের অভাব: এরা অন্যায়ের আশ্রয়ধারী৷ এদের
বাস্তবসম্মত দীর্ঘ পরিকল্পনা থাকে না।
৫. দায়িত্ববোধহীন: সামাজিক দায়িত্ববোধের অভাব।
উপধারা ৪.
১. অসামাজিকতায় লিপ্ত থাকা: মিষ্টভাষী এরা নানান
ধরনের সামাজিক কূকর্মে লিপ্ত থাকে।
২. নিজের অসদাচরণ অনিয়ন্ত্রিত রাখা: এরা মানুষের
বোধগম্যের নিচে অবস্থান করে নিজেদের অসদাচরন করতে থাকে।
৩. প্রারম্ভিক আচরণগত সমস্যা: এদের অনেকেই কৈশোর
বা যৌবনের প্রারম্ভিক সময় থেকে পাপ কাজে লিপ্ত থাকে।
৪. ফৌজদারী বহুমুখী অন্যায় কাজে লিপ্ত থাকা – সাইকোপ্যাথ পুরুষদের সহজে ধরা যায় কিন্তু
সাইকোপ্যাথি নারীর লক্ষণগুলো সামাজিক রীতি দিয়ে ঢাকা থাকে। তাই সাইকোপ্যাথ নারী
সনাক্ত একটু বেশি কষ্টকর।
৫. এদের অনেকেরই স্বল্পমেয়াদী বৈবাহিক সম্পর্ক
থাকে: অধিকাংশ নারীর মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।
৬. এলোমেলো যৌন
আচরণে লিপ্ত থাকা: অন্যান্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে এই উপাদান বিরাজমান
থাকবেই।