নির্জন দ্বীপটিতে আর কোনও
মানুষ ছিল না৷ নিজের সন্তানটিকেও মেরে ফেলেছিল বন্য কুকুরেরা৷ সেই জনমানুষ শূন্য
দ্বীপটিতেই তিনি ছিলেন টানা ১৮ বছর৷ তিনি জুয়ানা মারিয়া৷ যাঁর জীবন অনেকটা যেন
রবিনসন ক্রুসোর গল্পের মতোই৷
ক্যালিফোর্নিয়ার এক প্রত্যন্ত দ্বীপ সান নিকোলাস ৷ এতটাই প্রত্যন্ত
যে এখানেই একদা মার্কিন নৌবাহিনি পরমানু বোমা পরীক্ষা করেছিল৷ এহেন দ্বীপেই
বহুকাল ধরে বসবাস করত ‘নিকোলেও’ নামে এক নেটিভ আমেরিকান প্রজাতি৷ সেই গোত্রেরই
রমণী ছিলেন জুয়ানা৷ যদিও তাঁর সত্যি নাম এটা নয়৷ পরবর্তী কালে তাঁকে এই নামেই
ডাকা হত৷ ১০,০০০ বছর ধরে এই দ্বীপেই বাস করতেন তাঁরা৷ হঠাৎ একদিন শান্ত দ্বীপে ঘটে
বহিরাগত হানাদারি৷ রাশিয়ার উল ব্যবসায়ী ও আলাস্কার কিছু শিকারীরা যৌথভাবে আক্রমণ
করে ওই দ্বীপ৷ দ্বীপের মানুষগুলোকে সহজেই পরাস্ত করে চলে অবাধে লুঠপাঠ৷ সব
পুরুষদের মেরে ফেলা হয়৷ ধর্ষিতা হন নারীরা৷ প্রায় ধ্বংসপুরীতে পরিণত হয় ওই
দ্বীপ৷
১৮৩৫ সাল নাগাদ শোনা যায়, এই দ্বীপে তখনও কিছু
মানুষ বেঁচে আছেন৷ তাঁদের উদ্ধার করতে নৌকা পাঠানো হয়৷ যতজন বেঁচেছিলেন তাঁদেরকে
নৌকায় তুলেও নেওয়া হয়৷ কিন্তু বাকি থেকে যান জুয়ানা৷ আবার এও শোনা যায়,
জুয়ানা নৌকায় উঠে খেয়াল করেন তাঁর বাচ্চা নৌকায় নেই৷ ততোক্ষণে নৌকা ছেড়ে
দিয়েছে৷ জুয়ানা ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে দ্বীপে ফিরে যান৷
এরপর বহুবার তাঁর খোঁজ করা হয়েছে, পাওয়া যায়নি৷ ১৮ বছর পর হঠাৎ
তাঁর দেখা মেলে৷ যে ভাষায় তিনি কথা বলেছিলেন, তা বোঝা সম্ভব হয়নি৷ এক ভাষাবিদ
জানিয়েছেন, তিনি সম্ভবত বলতে চেয়েছিলেন যে, বন্য কুকুরেরা তাঁর বাচ্চাটিকে মেরে
ফেলেছিল৷ তাও ১৮ বছর ওই দ্বীপে একা একাই থেকেছেন জুয়ানা৷ তিমি, সিলমাছ মেরে খাবার
জুটিয়েছেন৷ সেগুলোর হাড় দিয়ে নিজের জন্য একা কুঁড়েঘরও বানিয়েছিলেন৷ এমনকী
পালক দিয়ে একটি পোশাকও বানিয়ে পরেছিলেন তিনি৷
উদ্ধারের পর তাঁকে সান্তা বারবারা মিশনে আনা হয়৷ জুয়ানা মারিয়ার এই
অদ্ভুত জীবন কাহিনি নিয়ে জায়গা করে নিয়েছে বইয়ের পাতাতেও৷ সে বইয়ের নাম
‘আইল্যান্ড অফ ব্লু ডলফিন’৷ কী ভাষায় তিনি কথা বলতেন কেউ বুঝতে পারেননি৷ তাঁর
ভাষার মতো রহস্যময় তাঁর জীবনও৷ সন্তানহীন, মানুষের সঙ্গহীন একা একজন মানুষের ১৮
বছর কোনও দ্বীপে বাস করার ঘটনা পৃথিবীতে বিরল৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন