মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০১৬

১৮ বছর একা দূর দ্বীপবাসিনী যে নারী






নির্জন দ্বীপটিতে আর কোনও মানুষ ছিল না৷ নিজের সন্তানটিকেও মেরে ফেলেছিল বন্য কুকুরেরা৷ সেই জনমানুষ শূন্য দ্বীপটিতেই তিনি ছিলেন টানা ১৮ বছর৷ তিনি জুয়ানা মারিয়া৷ যাঁর জীবন অনেকটা যেন রবিনসন ক্রুসোর গল্পের মতোই৷
ক্যালিফোর্নিয়ার এক প্রত্যন্ত দ্বীপ সান নিকোলাস ৷ এতটাই প্রত্যন্ত যে এখানেই একদা মার্কিন নৌবাহিনি পরমানু বোমা পরীক্ষা করেছিল৷ এহেন দ্বীপেই বহুকাল ধরে বসবাস করত ‘নিকোলেও’ নামে এক নেটিভ আমেরিকান প্রজাতি৷ সেই গোত্রেরই রমণী ছিলেন জুয়ানা৷ যদিও তাঁর সত্যি নাম এটা নয়৷ পরবর্তী কালে তাঁকে এই নামেই ডাকা হত৷ ১০,০০০ বছর ধরে এই দ্বীপেই বাস করতেন তাঁরা৷ হঠাৎ একদিন শান্ত দ্বীপে ঘটে বহিরাগত হানাদারি৷ রাশিয়ার উল ব্যবসায়ী ও আলাস্কার কিছু শিকারীরা যৌথভাবে আক্রমণ করে ওই দ্বীপ৷ দ্বীপের মানুষগুলোকে সহজেই পরাস্ত করে চলে অবাধে লুঠপাঠ৷ সব পুরুষদের মেরে ফেলা হয়৷ ধর্ষিতা হন নারীরা৷ প্রায় ধ্বংসপুরীতে পরিণত হয় ওই দ্বীপ৷
  ১৮৩৫ সাল নাগাদ শোনা যায়, এই দ্বীপে তখনও কিছু মানুষ বেঁচে আছেন৷ তাঁদের উদ্ধার করতে নৌকা পাঠানো হয়৷ যতজন বেঁচেছিলেন তাঁদেরকে নৌকায় তুলেও নেওয়া হয়৷ কিন্তু বাকি থেকে যান জুয়ানা৷ আবার এও শোনা যায়, জুয়ানা নৌকায় উঠে খেয়াল করেন তাঁর বাচ্চা নৌকায় নেই৷ ততোক্ষণে নৌকা ছেড়ে দিয়েছে৷ জুয়ানা ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে দ্বীপে ফিরে যান৷
এরপর বহুবার তাঁর খোঁজ করা হয়েছে, পাওয়া যায়নি৷ ১৮ বছর পর হঠাৎ তাঁর দেখা মেলে৷ যে ভাষায় তিনি কথা বলেছিলেন, তা বোঝা সম্ভব হয়নি৷ এক ভাষাবিদ জানিয়েছেন, তিনি সম্ভবত বলতে চেয়েছিলেন যে, বন্য কুকুরেরা তাঁর বাচ্চাটিকে মেরে ফেলেছিল৷ তাও ১৮ বছর ওই দ্বীপে একা একাই থেকেছেন জুয়ানা৷ তিমি, সিলমাছ মেরে খাবার জুটিয়েছেন৷ সেগুলোর হাড় দিয়ে নিজের জন্য একা কুঁড়েঘরও বানিয়েছিলেন৷ এমনকী পালক দিয়ে একটি পোশাকও বানিয়ে পরেছিলেন তিনি৷

উদ্ধারের পর তাঁকে সান্তা বারবারা মিশনে আনা হয়৷ জুয়ানা মারিয়ার এই অদ্ভুত জীবন কাহিনি নিয়ে জায়গা করে নিয়েছে বইয়ের পাতাতেও৷ সে বইয়ের নাম ‘আইল্যান্ড অফ ব্লু ডলফিন’৷ কী ভাষায় তিনি কথা বলতেন কেউ বুঝতে পারেননি৷ তাঁর ভাষার মতো রহস্যময় তাঁর জীবনও৷ সন্তানহীন, মানুষের সঙ্গহীন একা একজন মানুষের ১৮ বছর কোনও দ্বীপে বাস করার ঘটনা পৃথিবীতে বিরল৷ 

কোন মন্তব্য নেই: