খড়্গপুর: আইআইটি-র
ছাত্র আবর্জ্জনা সংগ্রহকারী। শুনতে অবাক হলেও এটাই সত্যি। তাও আবার যে-সে
আইআইটি নয়, খোদ খড়্গপুর আইআইটির পড়ুয়া আবর্জ্জনা সংগ্রহকারীর কাজে নিযুক্ত।
একজন নয়, কমপক্ষে তিনজন।
জানা গিয়েছে, খড়্গপুর আইআইটির পিএইচডি-র
ছাত্র অভিমন্যু কর এবং তাঁর দুই বন্ধু আবর্জ্জনা সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন।
সরকারি বা বেসরকারি কোনও সংস্থার অধীনে নয়, নিজেদের অধীনেই এই কাজ শুরু
করেছেন তাঁরা। এই তিন আইআইটি পড়ুয়া কেবল ডাস্টবিন থেকেই আবর্জ্জনা সংগ্রহ
করে না, লোকের বাড়ি-বাড়ি গিয়েও আবর্জ্জনা সংগ্রহ করেন। কিন্তু কেন? কেবল
পেটের দায়েই কি এঁরা আবর্জ্জনা সংগ্রহের কাজ করছেন? এই প্রশ্নের এককথায়
জবাব, “না’’। এর পিছনে ‘স্বচ্ছ ভারত’ বা দূষণমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার
মানসিকতাও রয়েছে।
আসলে পুনর্নবীকরণ সম্ভব এরকম বর্জ্যই
সংগ্রহ করেন এই ‘শিক্ষিত আবর্জ্জনা সংগ্রহকারীরা’। দূষণ এড়াতে এবং
পুনর্নবীকরণ দ্রব্যের ব্যবহার বাড়াতেই এই উদ্যোগ বলে জানান এই বিশেষ
প্রকল্পের হোতা অভিমন্যু কর। তাঁর কথায়, “এখনও পর্যন্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই
ব্যবহৃত বর্জ্য মাটিতে ফেলা হয়। এর থেকে দূষণ সৃষ্টি হয় এবং পুনর্নবীকরণ
জৈবগুলি আলাদা করা সমস্যা হয়। এখন এর বদল ঘটতে শুরু করেছে।’’ অভিমন্যু কর
এবং তাঁর দুই বন্ধু এই যে বিশেষ প্রকল্পটি চালু করেছেন, তার নাম ‘কাব্বাডি
অন কল’। অর্থাৎ আবর্জনা ফেলার জন্য একটা ফোন করলেই সাইকেল এবং ব্যাগ নিয়ে
হাজির হয়ে যাবেন অভিমন্যু বা তাঁর ‘কাব্বাডি কল’এর সদস্যরা।
২০১৪ সালে মাত্র তিনজন ‘কাব্বাডি কল’ চালু
করলেও বর্তমানে এই সংস্থার কাজ যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে কর্মী সংখ্যা।
তাই বাড়ির বর্জ্য ফেলার জন্য কাব্বাডি কলের কাছে আগে থেকে
অ্যাপোয়েন্টমেন্টও নিতে হয়। এই সংস্থারই সদস্য মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের এক
পড়ুয়া জানান, স্থানীয় আবাসনগুলি থেকে পুনর্নবীকরণ বর্জ্য নিয়ে আসার জন্য
তাঁরাই কর্মী জোগাড় করেন। ওই কর্মীরা ওজন মাপার একটি ডিজিটাল যন্ত্র এবং
মূল্য তালিকা নিয়ে লোকের বাড়ি পৌঁছে যান। তারপর বিভিন্ন ধরনের পুনর্নবীকরণ
বর্জ্য নিয়ে আসেন। পুনর্নবীকরণ দ্রব্যের মধ্যে শুকনো কাগজ, প্ল্যাস্টিক,
প্ল্যাস্টিকের বোতল, ইলেকট্রনিক্সের সামগ্রী সহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী থাকে
বলেও তিনি জানান। অভিমন্যু করের এই উদ্যোগকে পুরো খড়্গপুর আইআইটি এবং
এলাকাবাসী স্বাগত জানিয়েছে। আইআইটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক
সুধা গোয়েল বলেন, “এখন আমিও ওদের (কাব্বাডি কলের কর্মী) ডাকি এবং ওরা
পুনর্নবীকরণযোগ্য সমস্ত সামগ্রী নিয়ে যায়। আমি ভালো দামও দিই।’’ সুধা
গোয়েলের মত এলাকাবাসীর অনেকেই ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রদের এই কাজে খুশি হয়ে ভালো
দাম দেন। তাই বলা যায়, অভিমন্যু কর ও তাঁর দুই বন্ধুর এই ব্যবসায় তাঁদের
যেমন পেটের চিন্তা করতে হচ্ছে না, তেমনই উপকৃত হচ্ছে পরিবেশ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন