কলকাতা: প্রথমে অসহ্য মাথা ব্যাথা৷ তারপর চোখের জলের বদলে অঝোর
ধারায় রক্ত৷ বিরলতম রোগ ‘সাইকোজেনিক পুরপুরায়’ আক্রান্ত কলকাতার
কিশোরী প্রিয়া দাস ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠছে৷ ৷ কলকাতার নামী-দামি
নার্সিংহোম এমনকী চেন্নাইয়ের হাসপাতালও ফিরিয়ে দেওয়ার পর ইনস্টিটিউট অফ
সাইকিয়াট্রি-এর প্রধান প্রদীপ সাহা চিকিৎসা করছেন তার ৷ গত দু’মাস ধরে
চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে সে৷
অক্টোবর মাসের সন্ধে৷ কলকাতার কিশোরী প্রিয়া পড়ছিল তার জেঠুর কাছে৷
তার চোখের কাছটা লাল দেখে জেঠু বলেছিলে, ‘যাও গিয়ে চোখ ধুয়ে এস’৷
বাথরুমে গিয়ে আতঙ্কে কুঁকড়ে যায় প্রিয়া৷ টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া
সাক্ষাৎকারে সে জানায়, ‘‘চোখ দিয়ে জলের মতো রক্ত পড়ছে৷ আয়নায় রক্ত
দেখে আমি আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে যাই৷’’ দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান
পরিবারের লোকেরা৷ কিন্তু যাওয়ার পথেই চোখ থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে
যায়৷ চিকিৎসকদের যখন বিষয়টি বলা হয়, তখন তাঁরা হতবাক হয়ে যান৷ পরিবার
লোক কী বলতে চাইছে তা বুঝতেই পারছিলেন না তাঁরা৷ হাসপাতাল থেকে ফিরে আসার
কয়েকদিনের মধ্যে আবারও চোখ থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয় প্রিয়ার৷ চিকিৎসকদের
বিষয়টি দেখানোর জন্য ওই অবস্থাতেই তাঁরা ছুটে যান৷ কিন্তু চিকিৎসকরাই
ঘাবড়ে যান এতে৷ তাঁদের কাছে এটা কী রোগ, কেন হচ্ছে তার কোনও উত্তর ছিল
না, জানান প্রিয়ার মা তন্দ্রা দাস৷
পরবর্তীতে প্রিয়ার সিটি স্ক্যান, এমআরআই-সহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরিক্ষা
হয়৷ কিন্তু সব রিপোর্টই ছিল স্বাভাবিক৷ এদিকে চোখ দিয়ে রক্ত পড়ার
সমস্যারও কোনও সুরাহা না হওয়ায় প্রিয়াকে নিয়ে তাঁর বাবা-মা শহরের
নামীদামি নার্সিংহোমে ছুটে বেড়ান৷ ক্যালকাটাকা মেডিক্যাল কলেজ ও
হাসপাতালে চিকিৎসায় ধরা পড়ে প্রিয়ার মধ্যে তীব্র হতাশা, উদ্বেগে ভুগছে৷
যদিও বাইরে থেকে সবসময় তা বোঝা যাচ্ছে না৷ প্রিয়াকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে
যাওয়া হয় ভেলোরে৷ রোগ নির্নয় হলেও, চিকিৎসায় কোনও লাভ হচ্ছিল না৷
তারপর প্রিয়াকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয় ইনস্টিটউট অফ
সাইকিয়াট্রিতে৷ চিকিৎসক প্রদীপ সাহা ২ জানুয়ারি থেকে প্রিয়ার চিকিৎসা
করছেন৷ তিনি জানান এই রোগটির আরও একটি নাম আছে৷ ‘গার্ডনার ডায়মন্ড
সিন্ড্রোম’ অর ‘অটো এরিথ্রোসাইট সেনসিটাইজেশন’ অর ‘পেনফুল ব্রুশিং
সিন্ড্রোম’৷ বিরলতম রোগটি অতিরিক্ত চাপ ও হতাশা থেকে হয়৷
চিকিৎসক প্রদীপ সাহা প্রিয়ার মায়ের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন,
ট্রান্সফারেবল চাকরির কারণে বারবার জায়গা বদলাতে হয় তাঁদের৷ এক জায়গায়
থিতু হওয়ার আগে অন্য জায়গায় যেতে হয়৷ যেটা তাঁর মেয়ের মনের ওপর চাপ
ফেলে৷
প্রিয়ার মা তন্দ্রা জানিয়েছেন, তিন বার কাউন্সেলিং-এর পর তাঁর মেয়ে এখন অনেকটাই ভালো৷
তথ্যসূত্র-টাইমস অফ ইন্ডিয়া
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন