মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০১৬

চোখ থেকে রক্তক্ষরণ, ক্রমশ সুস্থ হচ্ছে কলকাতার কিশোরী

কলকাতা: প্রথমে অসহ্য মাথা ব্যাথা৷ তারপর চোখের জলের বদলে অঝোর ধারায় রক্ত৷ বিরলতম রোগ ‘সাইকোজেনিক পুরপুরায়’ আক্রান্ত কলকাতার কিশোরী প্রিয়া দাস ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠছে৷ ৷ কলকাতার নামী-দামি নার্সিংহোম এমনকী চেন্নাইয়ের হাসপাতালও ফিরিয়ে দেওয়ার পর ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি-এর প্রধান প্রদীপ সাহা চিকিৎসা করছেন তার ৷ গত দু’মাস ধরে চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে সে৷

অক্টোবর মাসের সন্ধে৷ কলকাতার কিশোরী প্রিয়া পড়ছিল তার জেঠুর কাছে৷ তার চোখের কাছটা লাল দেখে জেঠু বলেছিলে, ‘যাও গিয়ে চোখ ধুয়ে এস’৷ বাথরুমে গিয়ে আতঙ্কে কুঁকড়ে যায় প্রিয়া৷ টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সে জানায়, ‘‘চোখ দিয়ে জলের মতো রক্ত পড়ছে৷ আয়নায় রক্ত দেখে আমি আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে যাই৷’’ দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা৷ কিন্তু যাওয়ার পথেই চোখ থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়৷ চিকিৎসকদের যখন বিষয়টি বলা হয়, তখন তাঁরা হতবাক হয়ে যান৷ পরিবার লোক কী বলতে চাইছে তা বুঝতেই পারছিলেন না তাঁরা৷ হাসপাতাল থেকে ফিরে আসার কয়েকদিনের মধ্যে আবারও চোখ থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয় প্রিয়ার৷ চিকিৎসকদের বিষয়টি দেখানোর জন্য ওই অবস্থাতেই তাঁরা ছুটে যান৷ কিন্তু চিকিৎসকরাই ঘাবড়ে যান এতে৷ তাঁদের কাছে এটা কী রোগ, কেন হচ্ছে তার কোনও উত্তর ছিল না, জানান প্রিয়ার মা তন্দ্রা দাস৷

পরবর্তীতে প্রিয়ার সিটি স্ক্যান, এমআরআই-সহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরিক্ষা হয়৷ কিন্তু সব রিপোর্টই ছিল স্বাভাবিক৷ এদিকে চোখ দিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যারও কোনও সুরাহা না হওয়ায় প্রিয়াকে নিয়ে তাঁর বাবা-মা শহরের নামীদামি নার্সিংহোমে ছুটে বেড়ান৷ ক্যালকাটাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসায় ধরা পড়ে প্রিয়ার মধ্যে তীব্র হতাশা, উদ্বেগে ভুগছে৷ যদিও বাইরে থেকে সবসময় তা বোঝা যাচ্ছে না৷ প্রিয়াকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ভেলোরে৷ রোগ নির্নয় হলেও, চিকিৎসায় কোনও লাভ হচ্ছিল না৷

তারপর প্রিয়াকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয় ইনস্টিটউট অফ সাইকিয়াট্রিতে৷ চিকিৎসক প্রদীপ সাহা ২ জানুয়ারি থেকে প্রিয়ার চিকিৎসা করছেন৷ তিনি জানান এই রোগটির আরও একটি নাম আছে৷ ‘গার্ডনার ডায়মন্ড সিন্ড্রোম’ অর ‘অটো এরিথ্রোসাইট সেনসিটাইজেশন’ অর ‘পেনফুল ব্রুশিং সিন্ড্রোম’৷ বিরলতম রোগটি অতিরিক্ত চাপ ও হতাশা থেকে হয়৷

চিকিৎসক প্রদীপ সাহা প্রিয়ার মায়ের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, ট্রান্সফারেবল চাকরির কারণে বারবার জায়গা বদলাতে হয় তাঁদের৷ এক জায়গায় থিতু হওয়ার আগে অন্য জায়গায় যেতে হয়৷ যেটা তাঁর মেয়ের মনের ওপর চাপ ফেলে৷
প্রিয়ার মা তন্দ্রা জানিয়েছেন, তিন বার কাউন্সেলিং-এর পর তাঁর মেয়ে এখন অনেকটাই ভালো৷
তথ্যসূত্র-টাইমস অফ ইন্ডিয়া

কোন মন্তব্য নেই: